যৌথ ব্যাংক হিসাবধারীর দায়িত্ব: কেরালা হাইকোর্টের রায়ের বিশদ বিশ্লেষণ

 


রায়ের পটভূমি:

কেরালা হাইকোর্টের বিচারপতি আর. বাসন্ত ২০০৪ সালের ১৯ আগস্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ রায় প্রদান করেন যেখানে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল যে, একটি যৌথ

ব্যাংক হিসাবের ক্ষেত্রে, যিনি চেকটি স্বাক্ষর করেননি কিন্তু যিনি হিসাবের যৌথ অধিকারী, তিনি কি ১৮৮১ সালের নেগোশিয়েবল ইন্সট্রুমেন্টস অ্যাক্টের ধারা ১৩৮ এর অধীনে দায়ী হতে পারেন। এই প্রশ্নটি মামলার মূল বিষয়ে পরিণত হয়েছিল এবং আদালত এই বিষয়ে একটি স্পষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করেছিলেন।


মামলার বিশদ:

এই মামলায় আবেদনকারী একজন নারী ছিলেন, যিনি তার স্বামীর সাথে একটি যৌথ ব্যাংক হিসাব পরিচালনা করতেন। তার স্বামী এই ব্যাংক হিসাব থেকে একটি চেক ইস্যু করেন এবং তা অভিযোগকারীকে প্রদান করেন তার নিজস্ব ঋণ পরিশোধের জন্য। চেকটি পর্যাপ্ত অর্থের অভাবে ব্যাংক থেকে প্রত্যাখ্যাত হয় এবং অভিযোগকারী এরপর অভিযোগ দায়ের করেন, যা অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ধারা ১৩৮ এর অধীনে একটি ফৌজদারি মামলা রূপ নেয়। এই মামলায় অভিযোগকারীর প্রধান বক্তব্য ছিল যে, যেহেতু আবেদনকারী যৌথ হিসাবের অধিকারী, তাই তিনি চেক প্রত্যাখ্যানের জন্য দায়ী।


আইনের ধারা বিশ্লেষণ:

১৮৮১ সালের নেগোশিয়েবল ইন্সট্রুমেন্টস অ্যাক্টের ধারা ১৩৮ অনুসারে, একটি চেক প্রত্যাখ্যানের ক্ষেত্রে দায়িত্ব কেবল সেই ব্যক্তির উপর বর্তায় যিনি চেকটি স্বাক্ষর করেছেন। আইনের এই ধারায় স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, চেকটি "প্রদানকারী" দ্বারা ইস্যু করা হয়েছে, এবং যদি সেই ব্যক্তি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে চেকের অর্থ প্রদান না করেন, তবে তাকে দায়ী করা হবে। 


ধারা ১৩৮ অনুযায়ী, দায়িত্ব কেবল চেক প্রদানকারীর উপরই আরোপিত হয় এবং সেই ব্যক্তি যিনি চেকের যৌথ হিসাবের অধিকারী কিন্তু চেকটি স্বাক্ষর করেননি, তাকে এই ধারা অনুযায়ী দায়ী করা যায় না। "প্রদানকারী" বলতে বোঝানো হয়েছে সেই ব্যক্তিকে যিনি চেকটি তৈরি করেছেন বা স্বাক্ষর করেছেন। এর ভিত্তিতে, আবেদনকারী চেক প্রত্যাখ্যানের জন্য দায়ী হতে পারেন না, যেহেতু তিনি চেকটি স্বাক্ষর করেননি।


আদালতের যুক্তি এবং সিদ্ধান্ত:

আদালত উল্লেখ করেন যে, অভিযুক্ত (২য় অভিযুক্ত) চেকটি স্বাক্ষর করেননি এবং অভিযোগপত্রে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে চেকটি তার স্বামীর ঋণ পরিশোধের জন্য ইস্যু করা হয়েছিল। অভিযোগকারীর অভিযোগে আবেদনকারীকে দায়ী করার মতো কোন সুনির্দিষ্ট প্রমাণ ছিল না, যেহেতু তিনি চেকটি স্বাক্ষর করেননি এবং ব্যক্তিগতভাবে কোনো দায়িত্ব পালন করেননি। 


আদালত আরও উল্লেখ করেন যে, অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কোন সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়নি যে তিনি চেকের মাধ্যমেই অভিযোগকারীর দাবি অনুযায়ী অর্থ পরিশোধ করতে বাধ্য ছিলেন। অভিযুক্ত শুধুমাত্র যৌথ হিসাবের অধিকারী হওয়ার কারণে ফৌজদারি মামলার জন্য দায়ী হতে পারেন না। অতএব, মামলাটি বাতিল করার আদেশ দেওয়া হয় এবং অভিযুক্তকে এই ফৌজদারি মামলার মানসিক চাপ থেকে মুক্তি দেওয়া হয়।


রায়ের বিচারধারা:

এই রায়ে আদালত একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি প্রতিষ্ঠা করেন যে, যৌথ ব্যাংক হিসাবধারী হলেও, যদি সেই ব্যক্তি চেকটি স্বাক্ষর না করেন, তবে তাকে ১৮৮১ সালের নেগোশিয়েবল ইন্সট্রুমেন্টস অ্যাক্টের ধারা ১৩৮ এর অধীনে দায়ী করা যাবে না। আদালত স্পষ্টভাবে বলেন যে, কেবলমাত্র যৌথ হিসাবধারী হওয়ার কারণে কোনো ব্যক্তিকে দায়ী করা যায় না। 


এই রায়টি যৌথ হিসাবধারীদের জন্য একটি স্পষ্ট নির্দেশনা প্রদান করে যে, চেক ইস্যু এবং তার প্রত্যাখ্যানের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র চেক প্রদানকারী বা স্বাক্ষরকারীই দায়ী হতে পারেন, এবং সেই ব্যক্তি যিনি চেক স্বাক্ষর করেননি, তাকে কোনভাবে দায়ী করা যাবে না।


মামলার তথ্য:

Devi vs Haridas on 19 August, 2004, Kerala High Court  

Equivalent citations: I(2005)BC273, 2004CRILJ4710, 2004(3)KLT355  

Author: R. Basant  

Bench: R. Basant  


: