দেনমোহরের মামলা হলে কি করবেন?
মুসলিম বিবাহের ক্ষেত্রে দেনমোহর অন্যতম একটি শর্ত। এই দেনমোহর স্ত্রীর প্রতি স্বামরি একটি ঋণ। আমাদের সমাজে সাধারণত স্বামী স্ত্রীর মধ্যকার সম্পর্ক যতদিন ভালো থাকে ততদিন দেনমোহর পরিশোধ নিয়ে কোন কথাবার্তা হয় না। কিন্তু যখনই স্বামী স্ত্রীর মধ্যে সংসার ভাঙ্গনের সুর স্পষ্ট হয় তখনই দেনমোহর আদায় বা পরিশোধের বিষয়টি সামনে চলে আসে। দেনমোহর যত বেশিই ধায্য হয়ে থাকুক না কেন একবার যদি দেনমোহরের পরিমাণ ধায্য হয়ে যায় তাহলে স্ত্রী ছাড়া আর কারও সাধ্য নেই উক্ত দেনমোহর মাফ করা বা কমানো। আর একটি কথা, স্ত্রী তালাক দিলে দেনমোহরের টাকা পরিশোধ করতে হবে না এমনটা ভাবার কোন কারণ নেই। তালাক যেই দিক না কেন দেনমোহর অবশ্যই স্বামীকে পরিশোধ করতে হবে। তাই দেনমোহরের পরিমাণ আমার সাধ্যের অতিরিক্ত, স্ত্রী তালাক দিয়েছে বা স্বেচ্ছায় আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছে আমি কেন দেনমোহরের টাকা পরিশোধ করবো ইত্যাদি কথাগুলো অনেক দুরে সরিয়ে রাখতে হবে।
দেনমোহর আদায়ের মোকদ্দমা সহকারী জজ ও পারিবারিক আদালতে দায়ের ও বিচার হয়। আপনার স্ত্রী যদি দেনমোহর আদায়ের জন্য আপনার বিরুদ্ধে পারিবারিক আদালতে মামলা হয় তাহলে আপনি পারিবারিক আদালত হতে লোক মারফত এবং রেজিষ্ট্রি ডাকের মাধ্যমে মামলার সমন/নোটিশ এবং সাথে মামলার আরজির কপি পাবেন। টাকা তো আপনাকে পরিশোধ করতেই হবে। কিন্তু মামলা হওয়ার সাথে সাথেই আপনাকে টাকা পয়সা পরিশোধ করতে হবে না। এই সময়টি নির্ভর করবে কত দ্রুত বা কত দেরিতে আপনার মামলায় রায় ও ডিক্রি হবে তার উপর। মামলা সংক্রান্ত কাগজপত্র হাতে পাওয়ার পর একজন অভিজ্ঞ বিজ্ঞ আইনজীবীর সাথে যোগাযোগ করুন। কারণ আপনাকে মামলায় শক্তভাবে প্রতিদ্বন্দিতা করতে হবে। মামলায় প্রতিদন্দিতা না করলে মামলাটি খুব দ্রুত একতরফাবে রায় ও ডিক্রি প্রচার হয়ে যাবে।
মামলা সংকান্ত কাগজপত্র নিয়ে বিজ্ঞ আইনজীবীর সাথে যোগাযোগ করে উক্ত আইনজীবীর মাধ্যমে মামলায় প্রতিদন্দিতা করতে হবে। মামলায় প্রতিদন্দিতা শুরু হবে জবাব দাখিলের মাধ্যমে। আপনি জবাব দাখিল করলে আদালত আপনার এবং আপনার স্ত্রীর মধ্যে একটি আপোষ মীমাংসার চেষ্টা করবেন। আপনি যদি মনে করেন যে দেনমোহর পরিশোধ করার বিষয়টি আপনার সাধ্যের বাইরে তাহলে আপনি উক্ত আপোষ মীমাংসা কাজে লাগিয়ে আপনার স্ত্রী অর্থাৎ বাদীর সাথে আপোষ করে দেনমোহরের টাকার পরিমাণ কমানোর চেষ্টা করতে পারেন। যদি কমানো সম্ভব হয় তাহলে আপনাদের মধ্যকার আপোষ মীমাংসার শর্ত মোতাবেক আপনাকে টাকা পরিশোধ করতে হবে।
যদি আপোষ মীমাংসার চেষ্টা ব্যর্থ হয় তাহলে সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধ করা ছাড়া আপনার অন্য কোন উপায় থাকবে না। এক্ষেত্রে আপনাকে মামলায় প্রতিদন্দিতা করে যেতে হবে। মামলায় প্রতিদন্দিতা করার এক পর্যায়ে আপনার বিরুদ্ধে রায় ও ডিক্রি হলে উক্ত রায় ও ডিক্রিতে সাধারণত ৩০ দিনের মধ্যে টাকা পরিশোধ করার জন্য আপনাকে নির্দেশ দিতে পারেন।
টাকা পরিশোদ না করলে কি হবে।
আপনি যদি রায় ও ডিক্রি মোতাবেক ৩০ দিনের মধ্যে টাকা পরিশোধ করে দেন তাহলে মামলা ওখানেই শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু আপনি যদি রায় ও ডিক্রি মোতাবেক টাকা
পরিশোধ না করেন তাহলে আপনার বিরুদ্ধে মামলার বাদী উক্ত আদালতেই একটি জারী মামলা করবেন। উক্ত মামলার নোটিশও আপনি পাবেন। উক্ত মামলায় হাজির হয়ে আপনি
টাকা পরিশোধ না করলে আদালত আপনার বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা ইস্যু করবেন। গ্রেফতারী পরোয়ানা ইস্যু হলে উক্ত আদালতে হাজির হয়ে স্বেচ্ছায় আত্মসমার্পণ করে
জামিন নিতে হবে। জামিন নেওয়ার ক্ষেত্রে সাধারণত কিছু টাকা পরিশোধ করে জামিন নিতে হয়। আদালত জামিন না দিলে আপনাকে হাজতে যেতে হবে। এছাড়া আপনি আদালতেেউক্ত
মামলায় হাজির হয়ে কিস্তির মাধ্যমে টাকা পরিশোধের আবেদন জানাতে পারবেন। আদালত আপনার আবেদনে সন্তুষ্ট হলে প্রতি ধার্য্য তারিখে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দাখিল করার জন্য
আপনাকে নির্দেশ দিতে পারেন।
রায় ও ডিক্রি আপনার পছন্দ না হলে কি হবে
রায় ও ডিক্রি যদি আপনার পছন্দ না হয় অর্থাৎ রায় ও ডিক্রি দ্বারা যদি আপনি সংক্ষুব্ধ হন তাহলে উচ্চ আদালতে আপনি উক্ত রায় ও ডিক্রির বিরুদ্ধে আপীল দায়ের করতে পারবেন। এভাবে আপনি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত
অর্থাৎ বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগ পর্যন্ত যেতে পারবেন। মূলত পারিবারিক ও দেওয়াণ মামলা এভাবেই নিষ্পত্তি হয়।
আজ এ পর্যন্তই। ভিডিওটি ভালো লাগলে লাইক, কমেন্ট এবং বেশি বেশি শেয়ার করে অন্যকে দেখার সুযোগ করে দিন। আইন জানুন, আইন মানুন, আইন জানা থাকলে সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব হয়। পরবর্তী ভিডিও দেখার আমন্ত্রণ রইলো। আল্লাহ হাফেজ।
: